নিখুঁত জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল ব্যবহার ৯৯ শতাংশেরও বেশি সুরক্ষা দিতে সক্ষম। কিন্তু আমরা মানুষ হিসাবে এতোটা নিখুঁত নই যে প্রত্যেকেই সঠিকভাবে পিল গ্রহন করতে পারবো। গবেষয়ণায় দেখা গেছে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল ব্যবহার করেও প্রতি ১০০ জনে ৯জন গর্ভবর্তীর শিকার হচ্ছেন কোন না কোন ত্রুটির কারণে। নিম্নে ত্রুটিগুলো তুলে ধরা হলো:
পিল খেতে ভূলে যাওয়া
অধিকাংশ ক্ষেত্রে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল ব্যর্থতার কারণ এটি সঠিকভাবে ব্যবহার না করা। সর্বাধিক সুরক্ষার জন্য বড়িগুলি প্রতিদিন গ্রহণ করা প্রয়োজন। এর কারণ হল গর্ভাবস্থা সুরক্ষার জন্য আপনার হরমোনগুলিকে সামঞ্জস্যপূর্ণ স্তরে রাখতে হবে। আপনি যদি একটি পিল মিস করেন, তাহলে আপনি আপনার হরমোনের ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটাবেন এবং আপনার গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিবেন। তাই প্রতিদিন একটি নির্দিষ্টসময়ে পিল গ্রহন করা উত্তম।
অনুপযুক্ত সংরক্ষণ
অনেক মহিলাই জানেন না জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলগুলো ঘড়ের কত তাপমাত্রায় রাখতে হবে। অধিক তাপমাত্র এবং ঘনঘন তাপমাত্রা ওঠানামা পিলের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। এমনকি অতিরিক্ত ঠান্ডা পরিবেশ বা রেফ্রিজারেটর পিলটিকে কম কার্যকর করে তুলতে পারে। যা আপনাকে অপরিকল্পিত গর্ভাবস্থার জন্য আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। তাই ১৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পিল সংগ্রহ করতে হবে অথবা প্যাকেটের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।
ডায়রিয়া এবং বমি
এটা নির্ভর করে আপনি কখন এবং কতদিন ধরে অসুস্থ বা ডায়রিয়া আক্রান্ত আছেন তার উপর।
আপনি যদি একটি সংমিশ্রণ পিল গ্রহণের 3 ঘন্টার মধ্যে বা শুধুমাত্র প্রোজেস্টোজেন পিল গ্রহণের 2 ঘন্টার মধ্যে বমি করেন তাহলে সম্ভাবনা রয়েছে পিলটি আপনার শরীর দ্বারা শোষিত হবে না। সেক্ষেত্রে আপনাকে অন্য আরেকটি পিল নিতে হবে। এবং স্বাভাবিক সময়ে আপনার পরবর্তী পিল নিন।
আর যদি আপনি ২৪ ঘন্টার বেশি সময় ডায়রিয়া আক্রান্ত থাকেন তাহলে অসুস্থ থাকাকালীন প্রতিটা দিনকে একেকটি পিল মিস হওয়া দিন হিসাবে কল্পনা করুন।
অতিরিক্ত ওজন
জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলগুলি আপনার শরীরে যেভাবে বিপাক করে; উচ্চ শরীরের ওজন তার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। যদি আপনি জানেন যে আপনার উচ্চ বিপাক রয়েছে তাহলে একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলুন পিলগুলি আপনার জন্য কার্যকরী হবে কিনা।
নির্দিষ্ট কিছু ঔষধ
জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেলে স্বাভাবিকভাবেই কেউ গর্ভধারণ করে না। কিন্তু এমন কিছু ঔষধ রয়েছে যা একইসময়ে পিলের সাথে খাওয়া হলে পিলের কার্যক্ষমতা কমে যায় এবং গর্ভধারণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ঔষধগুলি হলো:
১) এন্টিবায়োটিক: বেশিরভাগ লোক মনে করেন এন্টিবায়োটিক পিলের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। প্রকৃতপক্ষে বেশিরভাগ ধরণের অ্যান্টিবায়োটিক তা করে না।। কেবলমাত্র যক্ষ্মা রোগের এন্টিবায়োটিক রিফামপিসিন রয়েছে যা গবেষণায় প্রমাণিত জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। এন্টিবায়োটিক পাকস্থলীর পরিবেশকে পরিবর্তন করে ফেলে তাই এন্টিবায়োটিক ব্যবহার কালীন পিলের পাশাপাশি ব্যাকআপ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।
২) এন্টি-এইচআইভি: গবেষণা দেখায় যে কিছু রেট্রোভাইরাল এইচআইভি চিকিত্সার জন্য ব্যবহৃত হয় ,যা আপনার জন্ম নিয়ন্ত্রণ কম কার্যকর করতে পারে।তাই এন্টি-এইচআইভি সেবনের পূর্বে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করুন।
৩) এন্টিভাঙ্গাল: দাদ, চুলকানির জন্য এন্টিফাঙ্গাল কিছু ঔষধ রয়েছে, যা এনজাইমকে বাধা দেয়ার মাধ্যমে জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের বিপাকের জন্য আংশিকভাবে দায়ী। Griseofulvin, Fluconazone, Itraconazole সম্ভব্যভাবে ইস্ট্রোজেনের প্লাজমা ঘনত্ব বাড়িয়ে তুলতে পারে। এর ফলে বমি বমি ভাব এবং স্তনের কোমলতা বাড়তে পারে। তাই এন্টিভাংগাল ব্যবহারে আপনার ডাক্তার অথবা ফার্মাসিস্টকে অবহিত করুন।
৪) অ্যান্টিকনভালসেন্টস: যেসব ঔষধ খিঁচুনি বা মৃগী রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় সেগুলি জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের সাথে হস্তক্ষেপ করে বলা জানা গেছে। বিশেষ করে মাইগ্রেন ও খিঁচজনি প্রতিরোধী Topimarate জন্ম নিয়ন্ত্রনকে কম কার্যকর করতে পারে।
৫) সাধারণ এনেস্থিসিয়া: ‘ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া সান ডিয়েগো’র আবাসিক অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট টেলর গ্র্যাবার বলেছেন , “সার্জিক্যাল পদ্ধতির সাথে জড়িত নিউরোমাসকুলার ব্লকেজগুলিকে উল্টাতে সুগামাডেক্স ব্যবহার করা হয় । ” “এই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলির মধ্যে একটি হল -এটি জন্মনিয়ন্ত্রণ ওষুধের সাথে আবদ্ধ এবং অস্থায়ীভাবে বাধা দেয়।”
তাই অ্যানেস্থেশিয়ার প্রয়োজন হলে আপনার সার্জনকে জানাতে হবে যে, আপনি জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি গ্রহণ করছেন, কারণ এটি কার্যকারিতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে।
৬) বমি বমি ভাব: এপ্রিটিট্যান্ট বমি বমি ভাব সৃষ্টিকারী রাসায়নিকগুলিকে ব্লক করার মাধ্যমে কাজ করতে গিয়ে বমি বন্ধ করে, যা জন্মনিয়ন্ত্রণের কার্যকারিতায় হস্তক্ষেপ করে।
৭) উচ্চ রক্তচাপ: বোসেন্টান এমন একটি ওষুধ যা ফুসফুসের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়। এই ওষুধটি রক্তে হরমোনের মাত্রা হ্রাস করার মাধ্যমে জন্মনিয়ন্ত্রণের কার্যকারিতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে। সেইসাথে এটি গুরুতর জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকিও বহন করে, তাই যে কোনও মহিলার এটি গ্রহণ করার সময় জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যাকআপ পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিৎ।
৮) ডায়াবেটিস: গবেষণায় দেখা গেছে যে pioglitazone এবং rosiglitazone maleate ওষুধগুলি ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করে, যা জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের কার্যকারিতা হ্রাস করতে পারে। বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি আছে কিনা তা জানতে আপনার গাইনি ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
৯) ভেষজ ও ভিটামিন সি: হাইপেরিকাম পার্ফ জাতক ভেষজ সম্পূরকগুলি ইস্ট্রোজেনের ভাঙ্গনকে ত্বরান্বিত করতে পারে এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে।
এছাড়া প্রায়ই ভিটামিন সি শরীরে ইমিউন ফাংশন বাড়াতে গ্রহণ করা হয়,এটি জন্ম নিয়ন্ত্রণের সাথেও যোগাযোগ করতে পারে। অতিরিক্ত ভিটামিন সি ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধির কারণ হতে পারে, যা সম্ভাব্য সমস্যাযুক্ত হতে পারে।
জন্ম নিয়ন্ত্রণের অকার্যকরতা প্রতিরোধ করার উপায় কি?
ওটিসি ওষুধ সহ নতুন ওষুধ গ্রহণ করার আগে সর্বদা আপনার ডাক্তারের সাথে জন্ম নিয়ন্ত্রণের মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে কথা বলুন। ঔষধ বা সম্পূরক আপনার জন্ম নিয়ন্ত্রণ কার্যকারিতা হস্তক্ষেপ করবে কিনা খোলামেলা জিজ্ঞাসা করুন। কার্যকারিতায় হস্তক্ষেপ করে এমন ওষুধ গ্রহণ করার সময় আপনি মৌখিক গর্ভনিরোধক ছাড়াও জন্ম নিয়ন্ত্রণের ব্যাকআপ ফর্ম (যেমন কন্ডম) ব্যবহার করুন।
আপনি যদি ব্যাকআপ পদ্ধতি ব্যবহার করতে ভুলে যান, তাহলে সহবাসের পর ৭২ ঘন্টার মধ্যে Emergency contraceptive pill ব্যবহার করুন। দীর্ঘমেয়াদী ওষুধের ক্ষেত্রে -যেমন উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং খিঁচুনি রোগের উপরোক্ত ঔষধ সেবন করতে হলে, আপনার প্রদানকারীর সাথে অন্যান্য গর্ভনিরোধ পদ্ধতি , যেমন ভ্যাসেকটমি বা ইনজেকশনযোগ্য প্রজেস্টেরন সম্পর্কে কথা বলা ভাল।