পরিবার পরিকল্পনা এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণের যতসব পদ্ধতি

জন্ম নিয়ন্ত্রণ

গর্ভধারণের ইচ্ছাকৃত প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে গর্ভনিরোধক হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। বিভিন্ন ডিভাইজ, যৌন চর্চা, রাসায়নিক ওষুধ বা অস্ত্রোপচার পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে জন্মনিয়ন্ত্রণ করা হয়। জন্ম নিয়ন্ত্রনের জন্য যে পদ্ধতিই ব্যবহার করা হোক না কেন, এর উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য নির্দিষ্ট – “একজন মহিলকে গর্ভবতী হতে না দেওয়া এবং দম্পত্তিকে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভাবস্থার ঝুঁকি ছাড়াই শারিরীক সম্পর্ক উপভোগ করতে দেওয়া।” 

কার্যকরী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি- যখন ইচ্ছা তখন সন্তান ধারণের পর্যাপ্ত স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। এবং জন্মনিয়ন্ত্রণের বাধা পদ্ধতি (যেমন কনডম) যৌন সংক্রামিত রোগ (এসটিডি/এইচআইভি) থেকে সুরক্ষা প্রদান করে।

তাই যৌনভাবে সক্রিয় হবার পরেও আমরা পরিবার পরিকল্পনা করতে পারি। আমাদের ইচ্ছানুযায়ী একটি বাচ্চা নিতে পারি এবং বাচ্চা নেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারি। আমাদের ক্যারিয়ার, আর্থিক পরিস্থিতি এবং বৈবাহিক অবস্থার ভিত্তিতে আমরা সঠিক এবং কার্যকর পরিবার পরিকল্পনা করার সুযোগ পাই। 

আমাদের স্বাধীনতা রয়েছে জন্ম নিয়ন্ত্রণের। যদিও অনেকেই জানিনা সঠিক পরিবার পরিবার পরিকল্পনা কি? এবং কি কি উপায় রয়েছে জন্ম নিয়ন্ত্রণের। কেউ কেউ ভাবি শুধুমাত্র মেয়েরা সারামাস পিল খেলেই জন্মনিয়ন্ত্রণ করা যায়। অথচ এই পিলগুলি সব মেয়ের সাথে মানানসই হয় না।

চাইলে ছেলেরাও স্থায়ী এবং অস্থায়ীভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাই আমাদের জানতে হবে- “ পিলের পরিবর্তে আর কি কি উপায় রয়েছে যেগুলি দ্বারা জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা যায়”। আজ আমি আপনাদের সঙ্গে একাধিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো। 

জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি

জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলোকে আমি প্রথমত দুই ভাগে ভাগ করছি।

  • অস্থায়ী পদ্ধতি
  • স্থায়ী পদ্ধতি। 

অস্থায়ী পদ্ধতি

যে পদ্ধতিগুলি পরিবর্তনযোগ্য; খুব সহজে একটি পদ্ধতি থেকে অন্য আরেকটি পদ্ধতিতে সুইচ করা যায় এবং পদ্ধতিগুলি কার্যক্ষমতার একটি নির্দিষ্ট সময়কাল রয়েছে সেগুলি হলো জন্ম নিয়ন্ত্রণের অস্থায়ী পদ্ধতি। 

এই অস্থায়ী পদ্ধতিগুলোকে মোট ৪ ভাগে ভাগ করতে পারি। সেগুলি হচ্ছে-

  • প্রাকৃতিক পদ্ধতি
  • জৈবিক পদ্ধতি
  • বাধা পদ্ধতি
  • হরমোনাল পদ্ধতি

প্রাকৃতিক পদ্ধতি

কোন কিছুর সাহায্য ছাড়াই কেবলমাত্র সচেতনতার মধ্য দিয়ে গর্ভনিরোধন করাকে জন্ম নিয়ন্ত্রণের প্রাকৃতিক পদ্ধতি বলে।

এই পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • বিরত থাকা
  • প্রত্যাহার করা এবং
  • ক্যালেন্ডার পদ্ধতি।

জৈবিক পদ্ধতি

জৈবিক পদ্ধতিগুলো প্রাকৃতিক জন্ম নিয়ন্ত্রণের একটি রূপ। আমরা সরাসরি এই পদ্ধতিগুলিতে হস্তক্ষেপ করতে পারিনা। কেবলমাত্র শারিরীক ক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে সচেতনতার মাধ্যমে জন্মনিয়ন্ত্রণের জৈবিক পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারি।

এই পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • শারিরিক তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ 
  • সার্ভিক্যাল শ্লেষ্মা পরিক্ষা এবং
  • ল্যাকটেশনাল অ্যামেনোরিয়া পদ্ধতি (LAM)

বাধা পদ্ধতি

জন্মনিয়ন্ত্রণের বাধা পদ্ধতি শুক্রাণুকে অবরুদ্ধ করে গর্ভধারণ রোধ করে। এটি শুক্রাণুকে ডিম্বাণুতে পৌঁছাতে বাধা দেয় এবং স্পার্মিসাইড  শুক্রাণুকে মেরে ফেলে।

জন্ম নিয়ন্ত্রণের বাধা পদ্ধতিগুলিকে দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। প্রথমটি যান্ত্রিক বাধা এবং দ্বিতীয়টি রাসায়নিক বাধা।

যান্ত্রিক বাধা

যান্ত্রিক বাধাগুলি এমন ডিভাইস যা শুক্রাণু এবং ডিম্বানুর মধ্যে একটি শারীরিক বাধা প্রদান করে।

এগুলির উদাহরণঃ

  • কন্ডম (পুরুষ ও মহিলা)
  • ডায়াফ্রাম
  • সার্ভিকাল ক্যাপ এবং
  • গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ।

রাসায়নিক বাধা

রাসায়নিক বাধা বা স্পার্মিসাইড হলো শুক্রাণু হত্যাকারী রাসায়নিক পদার্থ। যা প্রায়শই যান্ত্রিক বাধাগুলির সাথে মিলিত হয়ে মহিলাদের যৌনিপথে রেখে গর্ভনিরোধ করা হয়। 

এসকল রাসায়নিক পদার্থগুলি যেসকল ফর্মে পাওয়া যায় তা হলোঃ

  • ফোম
  • ক্রিম
  • জেল এবং
  • সাপোজিটরি।

হরমোনাল পদ্ধতি

জন্মনিয়ন্ত্রণের হরমোন পদ্ধতি হলো মহিলা হরমোন (ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টিন অথবা শুধুমাত্র প্রোজেস্টিন) এর কৃত্রিম সংস্করণ।এগুলি বেশিরভাগ মহিলার জন্য গর্ভাবস্থা প্রতিরোধ করার একটি নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য উপায়। 

হরমোন পদ্ধতির মধ্যে রয়েছেঃ

  • ইমপ্লান্ট,
  • অন্তঃসত্ত্বা ডিভাইস (IUD),
  • ইনজেকশন,
  • বড়ি,
  • যোনি রিং এবং
  • ত্বকের প্যাচ।

স্থায়ী পদ্ধতি

কেউ যদি ভবিষ্যতে জৈবিক সন্তান না চায় অথবা সন্তান ধারণ শেষ করে ফেলেন তাহলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নির্বীজন বা জন্ম নিয়ন্ত্রণের স্থায়ী পদ্ধতির পরিকল্পনা করতে পারেন। একবার এই পরিস্থিতে কনভার্ট হয়ে গেলে পদ্ধতি উল্টানো কঠিন। বিশেষ অস্ত্রোপচার পদ্ধতির মাধ্যমে কখনো পরিস্থিতিতে উল্টানো সম্ভব হলেও সাফল্যের কোন নিশ্চয়তা নেই।

জন্ম নিয়ন্ত্রণের স্থায়ী পদ্ধতিগুলি হলোঃ

2 thoughts on “পরিবার পরিকল্পনা এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণের যতসব পদ্ধতি”

  1. Pingback: জরুরি জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল সম্পর্কে যা আপনার জানা প্রয়োজন - সহবাস - যৌনতা ও যৌনবিদ্যা

  2. Pingback: শুধুমাত্র একমাসের জন্য আমি কি পিল নিতে পারবো? - সহবাস | Sohobas

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top