গর্ভধারণের জন্য সহবাসের উপযুক্ত সময়

মাসিকের কোন সময়টি গর্ভধারন যোগ্য? বাচ্চা নেবার উদ্দেশ্যে সহবাসে নির্দিষ্ট কোন ক্যালেন্ডার মানতে হয় কিনা এ বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান না থাকায় অতিরিক্ত কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত বাচ্চা প্রসবে আজও অবহিত নয় গ্রাম্য মায়েরা। বাল্যবিবাহ, যৌন শিক্ষার অভাব এবং সঠিক গাইডলাইনের অভাবে এ সমস্যা গুলো ঘটতে থাকে। মাসিক প্রক্রিয়ার কোন সময় যৌন মিলন করলে সন্তান আসবে, কোন সময়টা বাচ্চা ধারনে অক্ষম যদি স্বামী-স্ত্রীর সঠিক ধারনা থাকে তবে অপ্রার্থিত গর্ভরোধ সম্ভব হবে।

গর্ভধারণ প্রক্রিয়া কি? 

যৌন মিলনের পর পুরুষের শুক্রানু নারির যোনিপথ দিয়ে ফ্যালিপিওন টিউবে পৌছায়। প্রতিমাসে ওভারি থেকে বেরিয়ে আসা ডিম্বানুর সাথে মিলিত হয় এবং ডিম্বানুকে নিষিক্ত করে এক ধরণের ভ্রূন তৈরি করে। এই ভ্রুন তৈরির প্রক্রিয়াই হলো গর্ভধারণ প্রক্রিয়া। এখন প্রশ্ন থেকে যায়-

ওভারি থেকে কখন ডিম্বানু বের হয়ে আসে? 

যদি ক্যালেন্ডার মেনে সহবাস করেন তবে বিগত ছয় মাসের মাসিক সাইকেল দেখতে হবে। মাসিকের প্রথম দিন থেকে পরবর্তী মাসিকের পূর্ব দিন পর্যন্ত’সময়কালকে মাসিক সাইকেল ধরা হয়। ধরুন ১ জানুয়ারি আপনার মাসিক শুরু হয়েছে এবং পরবর্তীমাসিক একই মাসের ২৯তারিখ হয়েছে। সেক্ষেত্রে আপনার মাসিক সাইকেল ২৮ তারিখ পর্যন্ত কিংবা ২৮ দিনের। এভাবে গত ছয় মাসের মাসিক সাইকেল লিখে রাখতে হবে। ওভুলেশনের সঠিক সময় গণনার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সূত্র হলো সবচাইতে ছোট চক্র থেকে ১৮ এবং সবচাইতে বড়  চক্র থেকে ১১ বিয়োগ করতে হবে। উদাহরণ স্বরুপ, আপনার বিগত ৬ মাসের মাসিক চক্র ২৫ থেকে ৩২ দিন। তাহলে হিসাবটা হবে ২৫-১৮= ৭ম দিন আপনার ওভুলেশনের শুরুর দিন এবং ৩২-১১=২১তম দিন ওভুলেশনের শেষ দিন। এই ৭ম থেকে ২১তম দিনের মাঝে আপনার ওভুলেশনের সম্ভাবনা রয়েছে। ওভুলেশনের সময় ডিম্বানু ডিম্বাশয়ের বাইরে বেরিয়ে আসে এবং সর্বোচ্চ ২৪ঘন্টা ফেলোপিয়ান টিউবে অবস্থান করে। এই সংকীর্ণ সময়ের মধ্যে ডিম্বানু পুরুষের স্পার্মের মাধ্যমে নিষিক্ত হয়ে ভ্রুন তৈরি করে। এবং নারীকে গর্ভিণী করে তোলে।

একজন পুরুষের স্পার্ম নারীর শরিরে ৩-৭ দিন পর্যন্ত বেচে থাকে। তাই ১৪তম দিনে আপনার অভুলেশন হলেও এর ৭২ ঘন্টা আগের কিংবা পরের যৌনমিলন আপনার ডিম্বানুকে নিষিক্ত করে গর্ভধারনে উপযোগী গড়ে তুলতে পারে। তাই রেগুলার মিন্সট্রাশনে ১১ থেকে ১৭তম দিনকে বলা হয় ফার্টাল উইন্ডো বা গর্ভধারনের উপযোগী সময়। বাচ্চা নিতে চাইলে এই সময়টা কাজে লাগাতে হবে। এবং বাচ্চা নিতে না চাইলে এর সাথে আরো দুইদিন প্লাসমাইনাস করে মিন্সট্রাশন সাইকেলের মাঝের দশ দিন সতর্কতা অবলম্বন করে সহবাস করতে হবে।

এখন যাদের মিন্সট্রাশন অনিয়মিত তাদের জন্য গর্ভধারনে কি নিয়ম?  কিংবা জন্মবিরতিকরণে পদ্ধতি কি?

অনিয়মিত মাসিক বলতে একই সাইকেলে একাধিকবার মাসিক হওয়া। দীর্ঘদিন পর পর মাসিকচক্র শুরু হওয়া কিংবা একবার মাসিকচক্র শুরু হলে সেটা স্বাভাবিক সময়ের মধ্যে বন্ধ না হওয়া। অস্বাভাবিক রক্তপাত হওয়াকেও ই-রেগুলার কিংবা অনিয়মিত মিন্সট্রাশন হিসাবে ধরা হয়।

অনিয়মিত মাসিক হওয়ার জন্য বেশ কিছু কারন রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখ্য- 

অনিয়মিতভাবে জন্মবিরতিকরণ পিল গ্রহন করা। জরায়ু মুখে ইনফেকশন কিংবা টিউমার থাকা। ফ্যালিপিওন টিউব ব্লক থাকা। হরমোনাল ইমব্যালেন্স ওভার ওয়েট, ওজন হ্রাস।  থাইরয়েড সমস্যা, অতিরিক্ত রক্তক্ষরনে মস্তিস্কের পিটুইটারি গ্লান্ড হতে হরমন নিঃসৃত হওয়ার বাধা। কিশোরির মেয়েলি হরমোন (ইসট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন) গঠনে তারতম্য ইত্যাদি।

যেসকল মেয়েদের মাসিক সাইকেল অনিয়মিত তাদের অভুলেশনের সময়কাল শারিরীক সিন্ড্রমের উপর ভিত্তি করে বের করতে হয়।এসময় শরিরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, আঠালো সাদাস্রাব যায় এবং  যৌন আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি পায়। যদি এসব সিন্ড্রম একেবারেই বুঝতে না পারেন প্রতি একদিন অন্তর সহবাস করে ওভুলেশনের সময়টা কাজে লাগাতে পারেন। পুরুষের স্পার্ম নারীর শরিরে সাধারনত তিন দিন বেচে থাকে এবং নারীর ডিম্বানু ডিম্বাশয়ের বাইরে ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা বেচে থাকে। তাই একদিন পরপর সহবাস করলে পুরুষের স্পার্ম নিজে থেকেই ডিম্বানু খুজে নিতে পারবে।

তবে ই-রেগুলার মায়েদের ওভুলেশন ট্রাক করার সবচাইতে কার্যকরী ও সঠিক উপায় হচ্ছে অভুলেশন কিট ব্যবহার করা। এই কিট ব্যবহারবিধি ও নিয়ম প্রেগনেন্সি স্টিপ ব্যবহারের মতোই। ঘড়ে বসে নিজে থেকেই জানা যাবে আপনার ফার্টাল উইন্ডো। কিটটি সাধারনত ফার্মাসিতে পাওয়া যায়। চাইলে ঘড়ে বসেও অনলাইন অর্ডার করে পাওয়া যেতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top