সমকামিতা (ইংরেজি: Homosexuality, হোমোসেক্সুয়ালিটি) বলতে সমলিঙ্গের ব্যক্তির প্রতি যৌন আকর্ষণ অথবা যৌন আচরণকে বোঝায়। যেমন পুরুষের প্রতি পুরুষের যৌন আকর্ষন ও নারীর প্রতি নারীর যৌন আকর্ষন । এই ধরনের সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ব্যক্তিগত বা সামাজিক পরিচিতি, এই ধরনের আচরণ এবং সমজাতীয় ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত কোনো সম্প্রদায়কেও এই শব্দটি দ্বারা নির্দেশ করা হয়।
মহিলা সমকামীদের বোঝাতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত শব্দটি হল লেসবিয়ান (Lesbian) এবং পুরুষ সমকামীদের ক্ষেত্রে গে (Gay)।
এতদিন তেমনটাই ধারণা করে বা জেনে আসছিলেন সেক্যুলার সমাজ ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষেরা। সমকামিতার সাথে মানবজিনের কোনো সম্পর্ক রয়েছে কিনা, তা নিয়ে বিজ্ঞানী মহলেও চলছে অনেকদিনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। চলেছে বিতর্ক। কিন্তু, সম্প্রতি গবেষকরা বলছেন, সমকামিতার সাথে জিনের কোনো সম্পর্ক নেই। সমকামিতার পেছনে সামাজিক ও পারপার্শ্বিক পরিস্থিতিই দায়ী বলে উল্লেখ করেছেন তারা।
আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ ও আরো কিছু সংস্থার অর্থায়নে পরিচালিত একটি গবেষণার ফলাফলে উঠে আসে এমন তথ্য। প্রায় ৫০ লাখ নারী ও পুরুষের মধ্যে পর্যবেক্ষণ চালিয়ে গবেষকরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, সমকামী বা গে জিন বলতে কিছু নেই। গবেষকরা সমকামী নারী ও পুরুষের জিনগত বৈশিষ্ট্যে অনেক পার্থক্য খুঁজে পেয়েছেন।
তারা জানান, সমকামিতায় অভ্যস্তদের মধ্যে ব্যক্তিগত ও মানসিক কিছু সংকট দেখা গেছে। অবসাদ, সামাজিক চাপ এসবও কাজ করে থাকে অনেক ক্ষেত্রে।
মানুষের প্রতিটি বিহেভিয়রের সাথে কোন না কোন জিন জড়িত। আর অনেক সময় জিনকে স্বক্রিয় বা নিষ্ক্রিয় করণে পরিবেশ এর প্রভাব থাকে এ বিষয়কে বলে এপিজেনেটিক্স। এবার তাহলে দেখা যাক সমকামিতার পিছনে কোন জিন দায়ী কিনা? হ্যাঁ সমকামিতার জন্য বিজ্ঞানীরা কারণ হিসেবে একটি জেনেটিক মার্কারের অস্তিত্ব পেয়েছিলেন অনেক আগেই। আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগে বিজ্ঞানী হ্যামার X ক্রোমোজমের Xq28 স্থানে একটি মার্কারের অস্তিত্ব পেয়েছেন যা কিনা গে বা লেজবিয়ান হওয়ার জন্য দায়ী। হ্যামার তার এক্সপেরিমেন্ট এ যে নমুনা নিয়েছিলেন তার প্রায় ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে এধরণের জিনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তাহলে প্রশ্ন থাকে যে বাকী ৩০% এর ক্ষেত্রে কি হবে। বিজ্ঞানী হ্যামার শুধু X ক্রোমোজমের Xq28 স্থানে নির্দিষ্ট মার্কার খুজেছিলেন। পরে তিনি সমাপনী টানেন এই বলে যে অন্য কোন জিন এর জন্য দায়ী থাকতে পারে। অতি সম্প্রতি ৮ নম্বর ক্রোমোজমেও একধরণের মার্কার এর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে যা গে হওয়ার জন্য দায়ী।
শুরুতে ধারণা করা হয়েছিল যে এটা Y ক্রোমোজমের সাথে সম্পকির্ত কিন্ত পরে পেডিগ্রি (পুর্ব পুরুষ) এনালাইসিস করে দেখা গেল যে এটা কোন রোগীর মা বংশে পাওয়া যাচ্ছে বাবার বংশে নয়। তবে Y ক্রোমোজমের যে কোন ভূমিকা নেই তা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায়না। কারণ Y ক্রোমোজমের SRY জিনের ম্যালফাংশনের কারণেও অনেক সময় গে হয়ে থাকে।
এখন আসি গে বেশি দেখা যায় না লেসবিয়ান? গে এর অনুপাত বেশি দেখা যায় কারণ সমকামিতা X লিংকড। যেকোন X লিংকড বৈশিষ্টই পুরষের মাঝে থাকলেই তা প্রকাশিত হয় কিন্ত মেয়েদের ক্ষেত্রে দুই কপি থাকলে তা এক্সপ্রেস হয়।
- X + Y heterosexual male
- Xh + Y homosexual male
- X + X female heterosexual
- Xh + X female heterosexual carrier of the Xh gene
- X + Xh female heterosexual carrier of the Xh gene
- Xh + Xh lesbian.
হরমোনের প্রভাবেও সমকামি হয়। কিছু কিছু গবেষনা থেকে এমন সমাপনী টানা হয়েছে যে, যে সকল মা গর্ভাবস্থায় প্রচন্ড মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন তাদের সন্তানদের সমকামি হওয়ার একটা সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এটা অতটা জোরালো নয়। কারণ প্রচন্ড মানসিক চাপের মধ্যেই অনেক মা স্বাভাবিক সন্তান জন্ম দিয়েছেন। এবং এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক সন্তান হওয়ার পারসেন্টই বেশি।
এতো গেলো সমকামিতার পিছনে জিনগত কারণ ও হরমোনের প্রভাব। এধরণের ঘটনা গুলো যাদের সাথে ঘটে তারা ব্যক্তিগতভাবে এর জন্য দায়ী নয়। যেমন অনেক রোগের জন্যই রোগীরা দায়ী থাকেনা। এটা প্রাকৃতিকভাবেই ঘটে থাকে। এতে তাদের কোন হাত নেই। তবে কিছু এমন রোগী পাওয়া যায় যারা গেইজম চর্চা করতে করতে গে হয়ে গিয়েছে জন্মগত নয়।
সমকামিতায় জড়িত থাকার কারনে সমকামীদের বিভিন্ন ধরনের রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে ৷ সমকামিতায় প্রায় ৯০% এর বেশি সময় অ্যানাল সেক্স করা হয়। যা মলাশয় বা পায়ুপথ দিয়ে করা হয়ে থাকে । আর যৌনসঙ্গম এর জন্য মলাশয়কে ব্যবহার করা হলে তাতে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে ৷ কেননা পুরুষের লিঙ্গ মলাশয়ে ঢুকানো হলে সহজেই সেখানে ক্ষতের সৃষ্টি করে এবং মলাশয়ের ক্ষত’র মধ্য দিয়ে বীর্য সহজেই ব্লাডস্ট্রিমে ঢুকে পড়ে । এছাড়াও সমকামিতায় এইডস, সিফিলিস ও ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধির সম্ভাবনা রয়েছে।
(ক)এইডস:
সমকামীতা বা সমকামী যৌন সম্পর্ককে এইডস রোগের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল ও প্রিভেনশন ২০০৬ সালে সমকামীদের উপর একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। রিপোর্টে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার ২% সমকামী এবং এইচআইভি সংক্রমিত নতুন রোগীর মধ্যে ৫৩% শতাংশ সমকামী। ২০০৩ সালে এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির মধ্যে ৬৩% ছিল সমকামী।
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল ও প্রিভেনশনের ১৯৯৮ সালের প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যায়, নতুন এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির মধ্যে ৫৪% হলো সমকামী এবং এইডসে আক্রান্ত ৯০% ব্যক্তি সমকামী যৌনসঙ্গমের মাধ্যমে এইডসে আক্রান্ত হয়েছে ।
ডঃ ক্লুজনার, রবার্ট কোহন, চার্লোট কেন্ট ২০০৪ সালের প্রকাশিত ক্লিনিক্যাল ইনফেকশাস ডিজিজ জার্নালে মতামত দেন যে, সিফিলিস, গনোরিয়া, সাইটোমেগালো ভাইরাস সংক্রমণ, ক্ল্যামিডিয়া, হার্পিস, লিম্ফোগ্র্যানুলোমা ভেনেরাম ও এমিবিয়াসিস সমকামীদের মধ্যে অনেক বেশি থাকে। এছাড়া প্রোকটাইটিস নামক একটি রোগ দেখা যায় যার অন্যতম কারন এই রোগগুলো ৷ গবেষকরা আরো বলেন, এইডস হওয়ার সাথে গে-বাওয়েল সিন্ড্রোম এবং প্রোকটাইটিস রোগের গভীর সম্পর্ক রয়েছে ৷
এছাড়া হুভারের স্ট্যাটিস্টিক্যাল স্টাডির ফলাফলে দেখা যায়, ৫৫ বছর বয়সের মধ্যে এইডসে আক্রান্ত হওয়ার ৫০% সম্ভাবনা থাকে একজন ২০ বছর বয়সী সমাকামী কিশোরের । ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, সমকামী ও উভকামীদের প্রত্যেক ৫ জন ব্যক্তির মধ্যে ১ জন এইডসে আক্রান্ত এবং এর মধ্য ৫০ ভাগ মানুষ জানে না যে তারা এইডস রোগে আক্রান্ত ।
ওয়েবএমডি একটি নামকরা মেডিকেল সাইট। ২০০৪ সালে এই সাইট থেকে দাবী করা হয়, নারীর দেহে এইডস সংক্রমণের ক্ষেত্রে সমকামী ও উভকামী পুরুষ উল্লেখযোগ্য সেতুবন্ধনকারী হিসেবে কাজ করে। এছাড়া ২০০৬ সালে দেখা যায় শিশুদের মধ্যে যারা এইচআইভি এইডস আক্রান্ত তাদের মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক শিশু যৌনসহিংসতার শিকার হয়েছে সমকামী ব্যক্তি দ্বারা ।
(খ)সিফিলিস:
এইডস এর সাথে সিফিলিস এর মত রোগ ছড়াতেও সমকামিতা ব্যাপকভাবে দায়ী । ২০০৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটাতে সিফিলিসে আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ভাগ বেড়ে যায় । যার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে সমকামিতার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। মিনেসোটার ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ এ ২০০৮ সালে সিফিলিস সংক্রমণের ১৫৯ টি কেস পাওয়া যায় । ১৫৯ টি কেস এর মধ্যে ১৫৪টিই পুরুষের মধ্যে পাওয়া যায় এবং এর মধ্যে ১৩৪ জনই স্বীকার করে যে তারা আরেকজন পুরুষের সাথে সমকামিতায় লিপ্ত ছিল।
প্রোসিডিং অব দ্য রয়াল সোসাইটি অব মেডিসিনে ১৯৬২ সালে বিভিন্ন যৌনরোগের আধার হিসেবে সমকামিতাকে বিবেচনা করা হয় এবং সমকামিতার সঙ্গে সিফিলিস সংক্রমণের সম্পর্ক রয়েছে বলে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়।
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল ও প্রিভেনশন (সিডিসি) থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সাইবারকাস্ট নিউজ সার্ভিস জানায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৭ সালে ১২০০০ সিফিলিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ৬৫% হলো সমকামী। যা সিফিলিসের বিস্তারের ক্ষেত্রে প্রাইমারি ড্রাইভার হিসেবে কাজ করছে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, যেখানে ১০ বছর আগে সিফিলিস জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি(পাবলিক হেলথ থ্রেট) হিসেবে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিলো, তা নতুন করে ২০০০ সাল থেকে প্রতি বছরে আবারো বৃদ্ধি পাচ্ছে । এইডস সংক্রমণের হারের চেয়ে সমকামীদের মধ্যে সিফিলিস সংক্রমণের হার বেশি এবং ২০০৩ সালে সমকামীদের মধ্যে সিফিলিস সংক্রমণের এই হার এপিডেমিক (মহামারী) পর্যায়ের বলে জানা যায় । যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোতে সমকামী ব্যক্তিদের মধ্যে সিফিলিস সংক্রমণ এপিডেমিক পর্যায়ের ছিল।
ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল এ বলা হয়, ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে পুরুষ সমকামীদের মধ্যে সিফিলিসে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণের চেয়েও বেশি হারে (১৭২ থেকে ৩৭২) বেড়েছে এবং ৫৩% হারে নারী সমকামীদের মধ্যে সিফিলিস সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে । জার্নাল থেকে আরো বলা হয় যে, ইংল্যান্ডে ২০০০ সালে মোট সিফিলিস আক্রান্তের মধ্যে ৪৮% ই আক্রান্ত হয়েছে সমকামিতা থেকে ।
(গ)ক্যান্সার
সমকামীদের অধিকাংশ মূলত পায়ুপথ দিয়ে সেক্স করে। আর পায়ুপথ দিয়ে সেক্স করাকে অ্যানাল সেক্স বলা হয়৷ অ্যানাল সেক্স করার সময় খুব সহজেই নানারকম ক্ষত সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে আর ক্ষত থেকে রক্ত বের হয়ে অ্যানাল সেক্সে মলাশয়গাত্রে অতি সহজেই ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে এবং অ্যানাল রুট হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের জন্য একটি সহজপ্রবেশ্য রুট বলে অ্যানাল ক্যান্সারের হার সমকামীদের মধ্যে অত্যন্ত বেশি। নার্সিং ক্লিনিক অব নর্থ আমেরিকার জার্নালের জুন, ২০০৪ রিপোর্টে দেখা যায় – এইডস আক্রান্ত ৯০% সমকামী ব্যক্তিদের দেহে এবং এইডস ব্যতীত ৬৫% সমকামী ব্যক্তিদের দেহে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস রয়েছে যার মধ্যে এইচপিভি টাইপ ১৬ ক্যান্সারের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ প্রকরণ।
সমকামীদের মধ্যে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসজাত অ্যানাল ক্যান্সারের ঝুঁকি বিষমকামীদের তুলনায় ১০ গুণ বেশি। এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অ্যানাল ক্যান্সার হওয়ার ক্ষেত্রে সমকামীদের মধ্যে এই ঝুঁকি বিষমকামীদের তুলনায় ২০ গুণ বেশি ।
বাংলাদেশের সংবিধানে সকল নাগরিকের ধর্মীয় ও সামাজিক অধিকার দেয়া হলেও নৈতিক অবক্ষয়ভিত্তিক বিধিনিষেধ রয়েছে। ৩৭৭ ধারা মোতাবেক সমকামিতা ও পায়ুমৈথুন শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ, যার শাস্তি দশ বছর থেকে শুরু করে আজীবন কারাদণ্ড এবং সাথে জরিমানাও হতে পারে। ৩৭৭. প্রকৃতিবিরুদ্ধ অপরাধ: কোন ব্যক্তি যদি স্বেচ্ছায় কোন পুরুষ, নারী বা পশুর সঙ্গে প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে যৌন সঙ্গম করে, তবে তাকে আজীবন কারাদণ্ড দেয়া হবে, অথবা বর্ণনা অনুযায়ী নির্দিষ্টকালের কারাদণ্ড প্রদান করা হবে যা দশ বছর পর্যন্ত বর্ধিত হতে পারে, এবং এর সাথে নির্দিষ্ট অঙ্কের আর্থিক জরিমানাও দিতে হবে। ব্যাখ্যা: ধারা অনুযায়ী অপরাধ প্রমাণে যৌনসঙ্গমের প্রয়োজনীয় প্রমাণ হিসেবে লিঙ্গপ্রবেশের প্রমাণ যথেষ্ট হবে।
৩৭৭ ধারার ব্যাখ্যায় পায়ুসঙ্গমজনিত যে কোন যৌথ যৌন কার্যকলাপকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একারণে, পরস্পর সম্মতিক্রমে বিপরীতকামী মুখকাম ও পায়ুমৈথুনও উক্ত আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হতে পারে।
ইসলামে সমকাম বা homosexuality সম্পূর্ণ অবৈধ বা হারাম। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে হযরত লুত (আ.) এর কওমকে (Sodom আর Gomorrah নগরী) আল্লাহ ধ্বংস করে দিয়েছিলেন যেসব কারণে এর মধ্যে সমকামিতা ছিল অন্যতম। আল কুরআনে সমকামীতাকে নিকৃষ্টতম পাপাচার ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। “এবং আমি লূতকে প্রেরণ করেছি। যখন তিনি স্বীয় সম্প্রদায়কে বললেন, তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করছ, যা তোমাদের পূর্বে সারা বিশ্বের কেউ করেনি ? তোমরা তো কামবশতঃ পুরুষদের কাছে গমন কর নারীদেরকে ছেড়ে। বরং তোমরা সীমা অতিক্রম করেছ।” (আরাফ ৭:৮১-৮২) “সারা জাহানের মানুষের মধ্যে তোমরাই কি পুরূষদের সাথে কুকর্ম কর? এবং তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্য সঙ্গিনী হিসেবে যাদের সৃষ্টি করেছেন, তাদেরকে বর্জন কর? বরং তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।” (শুয়ারা ২৬:১৬৫-১৬৬)
হাদিসে রাসুল (সা.) এ সমকাম অপরাধ বিষয়টি খুবই সুষ্পষ্ট। ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স) বলেছেন, অভিশপ্ত সে যে কিনা কোন পশুর সাথে কামাচার করে, আর অভিশপ্ত সে যে কিনা সেটা করে যা লুতের সম্প্রদায় করত।” (আহমাদ:১৮৭৮) উল্লেখ, ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায় হযরত লুত (আ.) এর কওমের লোকেরা সমকামী ছিল। আর এজন্যই তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।
হিন্দু ধর্মেও সমকামিতা অপরাধ। মনুস্মৃতি হচ্ছে হিন্দু ধর্মের আইনশাস্ত্র। মনুসংহিতার অষ্টম অধ্যায়ের ৩৬৯ এবং ৩৭০ নম্বর ছত্রে দ’জন নারীর মধ্যে সমকামিতা সংঘটিত হলে কি শাস্তি হবে তার উল্লেখ আছে। যদি দুই কুমারীর মধ্যে সমকামিতার সম্পর্ক স্থাপিত হয়, তাহলে তাদের শাস্তি ছিলো দুইশত মূদ্রা জরিমানা এবং দশটি বেত্রাঘাত (Manu Smriti chapter 8, verse 369.)
যদি কোন বয়স্কা নারী অপেক্ষাকৃত কম বয়সী নারীর (কুমারীর)সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করে, তাহলে বয়স্কা নারীর মস্তক মুন্ডন করে দুটি আঙ্গুল কেটে গাধার পিঠে চড়িয়ে ঘোরানো হবে’ (Manu Smriti chapter 8, verse 370.)।
দু’জন পুরুষ অপ্রকৃতিক কার্যে প্রবৃত্ত হলে তাদেরকে জাতিচ্যুত করা হবে এবং জামা পরে তাকে জলে ডুব দিতে হবে (Manu Smriti Chapter11, Verse 175.)।
বৌদ্ধধর্মেও সমকামীতাকে বৈধতা দেয়া হয়নি। ত্রিপিটকের ভাষ্যমতে, অতীত কর্মের কারণেই জন্মগতভাবে তাদের সমকামীতার মানসিকতা সৃষ্টি হয় (মহাবর্গ অ.১০৫)। এ বিষয়ে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গী হচ্ছে, হরমোন ও জিনগত কারণেই জন্মগতভাবে এরকম মানসিকতা তৈরি হয়। যদিও কেন হরমোন ও জিনগুলো সেরকম অস্বাভাবিক আচরণ করে, বিজ্ঞান তার কোনো উত্তর দিতে পারে না। অথচ বৌদ্ধধর্ম সেটার কারণও নির্দেশ করে দিয়েছে এই বলে, সেটা হচ্ছে তাদের পূর্বকৃত কর্মের ফল।
খ্রীষ্টধর্মেও বলা হয়েছে, সমকামীরতা এক ধরনের পাপ (আদিপুস্তক-১৯:১-১৩; লেবীয়-১৮:২২; রোমীয়-১;২৬-২৭; ১ করিন্থীয়-৬:৯) রোমীয় ১:২৬-২৭ পদ সুনিদিষ্টভাবে শিক্ষা দেয় যে, ঈশ্বরের অবাধ্য হওয়া এবং তাকে অস্বীকার করার ফল স্বরূপ সমকামীদের শাস্তি দেয়া হয়েছে। লোকেরা যখন অবিশ্বা কারণে পাপ করতেই থাকে, তখন ঈশ্বর ‘লজ্জাপূর্ণ কামনার হাতে’ তাদের ছেড়ে দেন যেন তারা আরও জঘন্য পাপে ডুবে যায় এবং ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে থাকার ফলে নিষ্ফল ও নৈরাশ্যের জীবন অনুভব করতে পারে। ১ করিন্থীয় ৬:৯ পদে বলা হয়েছে, যারা সমকামীতায় দোষী তারা ঈশ্বরের রাজ্যের অধিকার পাবে না। বাইবেলে বলা হয়েছে, লোকেরা পাপের কারণে সমকামী হয় (রোমীয়-১:২৪-২৭)
- ইচ্ছাশক্তি এবং মনের জোরেই যে কোন কিছু থেকে নিজেকে বিরত রাখার সবচেয়ে বড় অস্ত্র। কেউ যদি ভুল করে সমকামী লাইফে প্রবেশ করে তাহলে নিজের ইচ্ছাশক্তির উপর ভর করেই তাকে আস্তে আস্তে সরে আসতে হবে।
- সর্বদা আল্লাহর ভয় অন্তরে জাগ্রত রাখতে হবে। মনে রাখা দরকার যে, আমাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কিয়ামতের মাঠে আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হয়ে দাঁড়াবে। তখন আমরা যত অন্যায় ও পাপকর্ম করেছি সব কিছুই প্রকাশ হবে।
- “যেদিন প্রকাশ করে দেবে তাদের জিহবা, তাদের হাত ও তাদের পা, যা কিছু তারা করত।” (সূরা নূর: ২৪)
- যদি বিপরীত লিঙ্গের প্রতি মোটেই আকর্ষণবোধ না থাকার কারণে বিয়ে করা সম্ভব না হয় অথচ প্রচণ্ড যৌন বাসনা অনুভব করে তাহলে করণীয় হল, রোজা রাখা। কেননা রোজার মাধ্যমে যৌন বাসনা নিয়ন্ত্রিত থাকে।
- কখনো একাকী নিভৃতে না থাকা। কেননা একাকীত্ব যৌন চিন্তা জাগ্রত করে। বরং যে কোন দীন বা দুনিয়ার উপকারী কাজে সময়কে কাজে লাগাতে চেষ্টা করতে হবে। যেমন: নেক আমল করা, কুরআন তিলাওয়াত করা, কুরআনে তাফসির পড়া, কুরআন মুখস্থ করা, জিকির করা, নামায পড়া, ইসলামি বই পড়া, ভালো আলেমদের লেকচার শোনা, শিক্ষণীয় ও উপকারী কোন কোর্স করা, জনকল্যাণ মূলক কাজ, শখের কাজ করা (যদি তা হারাম না হয়) ইত্যাদি।
- পাপিষ্ঠ ও খারাপ লোকদের সংশ্রব থেকে দূরে থাকা। কারণ মানুষ সঙ্গ দোষে অন্যায় ও অশ্লীল পথে পা বাড়ায়।
- যৌন উদ্দীপক মুভি, মিউজিক ভিডিও, গান, টিভি শো ইত্যাদি না দেখা এবং অশ্লীল গল্প-উপন্যাস না পড়া।
- যৌন বাসনাকে উদ্দীপ্ত করে এমন খাওয়া-দাওয়াও সীমিত করা দরকার। কেননা এসব খাদ্যের প্রভাবে শরীরে যৌন চাহিদা বৃদ্ধি পায়।
- তারপরও মনে খারাপ চিন্তা জাগ্রত হলে তৎক্ষণাৎ শয়তানের প্ররোচনা থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা তথা আউযুবিল্লাহি মিনাশ শয়তানির রাজীম পাঠ করা কর্তব্য।
- সর্বোপরি মহান আল্লাহর নিকট নিজের সমস্যা থেকে মুক্তি চেয়ে দুআ ও আরাধনা করা।
ভালো লিখেছেন
Pingback: লিঙ্গ পরিচয় এবং যৌন অভিযোজন - সহবাস | Sohobas