জরুরি জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল সম্পর্কে যা আপনার জানা প্রয়োজন

emergency contraceptive pill

ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল কি?

Emergency Contraceptive Pill (ECP) বা জরুরি গর্ভনিরোধক বড়ি হলো এক ধরনের হরমোন জাতীয় ওষুধ; যা ইস্ট্রোজেন বা প্রজেস্টেরন অথবা উভয়ের মিশ্রণজাতীয় পিল। সাধারণ পিলের সাথে এই পিলের পার্থক্য হলো- এখানে হরমোনের অনেক বেশি মাত্রা ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের পিলগুলি বিশ্বব্যাপী Morning After Pill নামেও পরিচিত। 

ইমার্জেন্সি জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য US FDA প্রজেস্টিন জাতীয় ঔষধ হিসাবে লেভনরজেস্ট্রিল (Levonorgestrel) কে ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে; যা সহবাসের ৭২ ঘন্টার মধ্যে ব্যবহার করতে হয়। আমাদের দেশে এই ধরনের পিলগুলির উদাহরণ হচ্ছে- নোরিক্স, ইমকন, নরপিল, আইপিল ইত্যাদি।

এছাড়াও ইউলিপ্রিস্টল এসিটেট জাতীয় অন্য আরেকটি ইমার্জেন্সি পিল রয়েছে; যা সহবাসের পর ১২০ ঘন্টা / ৫ দিনের মধ্য গ্রহণ করলে গর্ভধারণ রোধ করা যায়। এই পিলগুলির উদাহরণ হচ্ছে- পিউলি, এম-পিল, 5X etc

ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপশন পিল কিভাবে কাজ করে?

এই পিলগুলি ডিম্বাশয় থেকে একটি ডিম্বাণু নিঃসরণে বাধা দেয় । সহজ করে বললে আগামী 5 থেকে 7 দিন ডিম্বানুর মুক্তি বিলম্বিত করে। ততক্ষণে, মহিলার প্রজনন ট্র্যাক্টে অবস্থিত যেকোনও শুক্রাণু মারা যাবে, কারন পুরুষের শুক্রাণু নারীর শরীরে মাত্র 5 দিন বেঁচে থাকতে পারে। আর যদি ইতিমধ্যে ডিম্বাণু নিষিক্ত হয়, তাহলে ECP ইমপ্লান্টেশন রোধ করে না বা ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত গর্ভাবস্থাকে ব্যাহত করতে পারে না।

কখন এবং কাদের জন্য ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপশন পিল?

আমাদের ভিতর এক শ্রেণীর লোক ভেবেই নেই যে, কেবলমাত্র অবিবাহিত মেয়েদের জন্য কিংবা গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড ডেটিং এর জন্য এই পিলগুলি বানানো হয়েছে। আসলে বিষয়টি এমন নয়। অনেক কারণেই একজন মহিলা ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপশন পিল ব্যবহার করতে পারে।সম্ভব্য কারণগুলি হলো-

  • কোন মেয়ে ধর্ষণের স্বীকার হলে 
  • সহবাসের সময় জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবহার করতে ভূলে গেলে
  • সহবাসের সময় কন্ডম সঠিকভাবে ব্যবহার না করা হলে কিংবা কন্ডম ফেটে গেলে
  • যদি কেউ বুঝতে পারে তার জড়ায়ুতে অবস্থিত জন্মবিরতিকরণ আই, ইউ, ডি স্থানচ্যুত হয়েছে।
  • যদি কেউ পরপর তিনদিন জন্মনিয়ন্ত্রণের রেগুলার পিল খেতে ভূলে যায়।
  • যদি কেউ মনে করে যে, coitus interruptus অকার্যকর হয়েছে এবং তিনি ক্যালেন্ডার তথা rhythm method অনুসরণ কালীন সহবাস করে ফেলেন।

ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল খাওয়ার নিয়ম কি?

এই ধরনের পিলগুলিতে সাধারণত একটি বড়ি থাকে। অরক্ষিত সহবাসের পর অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ প্রতিরোধের জন্য যত দ্রুত সম্ভব একটি ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপশন পিল খেয়ে নিতে হবে। কোন ক্ষেত্রে ১২ ঘন্টার ব্যবধানে দুইটি মাত্রা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

দিনে-রাতে বা মাসের যেকোন সময় এই ধরনের পিল গুলি খাওয়া যায়। পিল খাওয়ার সাধারণ নিয়ম হলো- একগ্লাস পানির সাথে সহবাস পরবর্তী ৭২ ঘন্টার মধ্যে পিলটি খেয়ে নিতে হবে। 

তবে সবথেকে সঠিক কাজটি হলো- ভিতরের নির্দেশিকা লিফলেটটি অনুসরণ করা। কারন নির্দিস্ট ব্রান্ডের পিলের জন্য আলাদা কিছু নিয়ম থাকতে পারে।

সাবধানতা

যেহেতু ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপশন পিল কোন রেগুলার জন্মবিরতিকরণ বড়ি নয়। তাই একই ঋতুচক্রে একাধিকবার এই পিল ব্যবহার না করাটাই ভাল। তবে গবেষণা বলছে একই চক্রে কেউ ইচ্ছা করলে একাধিকবার এই পিলের ব্যবহার চালিয়ে নিতে পারবে। তবে আমি মনে করি, ইমার্জেন্সি শব্দটা কেবল বিশেষক্ষেত্রেই নির্দেশিত। যদি কোন মহিলার প্রায়শই ECP-এর প্রয়োজন হয় তাহলে তাকে জন্মনিয়ন্ত্রণের অন্যসব পদ্ধতিতে সুইচ করাই ভালো।

পিল ও পিরিয়ড

ইমার্জেন্সি পিল ব্যবহারের ফলে পরবর্তী মাসিক রক্তচাপ নির্ধারিত সময়ে নাও হতে পারে। ডিম্বাণু পরিস্ফুটনের আগে পিল গ্রহণ করলে কয়েকদিনের মধ্যে রক্তচাপ হয়ে যাবে। আর ডিম্বাণু পরিস্ফুটনের পরে পিল গ্রহন করলে মাসিক কয়েকদিন বিলম্বিত হতে পারে। তবে ঔষধ খাওয়ার পর যদি নির্ধারিত সময়ের ৭ দিনপরেও মাসিক রক্তচাপ ফিরে না আসে, সেক্ষেত্রে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে নিতে হবে।

একইসাথে নির্দিষ্ট ধরনের কিছু ঔষধ সেবন করলে ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপশন পিলগুলি আপনার শরীরে নাও কাজ করতে পারে। তাই সহবাস ওয়েবসাইট থেকে অন্য আরেকটি আর্টিক্যাল পড়ে জেনে নিতে পারেন ‘কখন পিলের কার্যক্ষমতা কমে যায়?’

গর্ভাবস্থা ও স্তন্যদান

গর্ভাবস্থায় এই ঔষধ অনুমোদিত নয়। এবং এটি গর্ভাবস্থায় কোন পরিবর্তন ঘটাতে পারে না। অর্থাৎ এই ঔষধ খাওয়ার পরেও কেউ যদি গর্ভধারণ করে থাকে কিংবা যেসব মহিলারা ইতিমধ্যে গর্ভধারণ করেছেন বলে ধারণা করছেন তাদের জন্য এ ধরনের পিল গর্ভধারণকে প্রতিরোধ করতে পারে না। পরিক্ষা এটাই প্রমাণ করে যে, প্রজেস্টোজেন মানব ভ্রুণের গঠনে কোন ক্ষতি করে না, বা ভ্রুণের উপর বিরুপ প্রতিক্রিয়া ফেলে না।  

স্তন্যদান

লেভনরজেস্ট্রিল জাতীয় পিলগুলি সেবনের পরেও স্তন্যদান সম্ভব।তবে এটি মায়ের বুকের দুধের সাথে মিশ্রিত হওয়ার কারনে স্তন্যদানের পূর্বেই বড়িটি সেবন করা উচিৎ।

অন্যদিকে, ইউলিপ্রিস্টল এসিটেট সরাসরি বুকের দুধে নিঃসৃত হয়। যারফলে এই পিলটি খাওয়ার পরবর্তী ৭দিন পর্যন্ত স্তন্যদান করা যাবে না। যদিও নবজাতকের উপর ইউলিপ্রিস্টলের প্রভাব সীমিত।

অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিক্রিয়া সমূহ

প্রতিটা ঔষধেই নির্দিষ্ট পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পিলটিও এর ব্যতিক্রম কিছু নয়। ইমার্জেন্সি পিলের ব্যবহারের অস্বস্থিবোধগুলি হচ্ছে-

  • বমি বা বমি বমি ভাব
  • মাথা ব্যথা বা ঝিমুনিভাব
  • পেটে ব্যথা
  • অনাকাঙ্ক্ষিত রক্তক্ষরণ কিংবা 
  • স্তনে ব্যথা অনুভব করা।

একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, এই পিলটি সেবন করার পর তিন ঘন্টার মধ্যে আপনার যদি বমি হয় তাহলে আপনাকে আরও একটি পিল খেয়ে নিতে হবে।

এবং পিল খাওয়ার পর অস্বাভাবিকভাবে কোনকিছু লক্ষ্য করলে দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top